Advertisement

Responsive Advertisement

ইবনুল হাইসাম: একটি ইতিহাস-বিজ্ঞানের অনবদ্য গল্প

ইবনুল হাইসাম: কারাগারে আবিষ্কৃত আলোর রহস্য

কারাবন্দি বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার

লেখক:

মুসলিম ইতিহাসে একজন খলিফা ছিলেন, যিনি পরিচিত ছিলেন 'পাগলা খলিফা' নামে। তার নাম ছিল আল হাকিম। মিশরের ফাতেমি খিলাফতের খলিফা ছিলেন তিনি।

আল হাকিমের হুকুমগুলো ছিল খুব অদ্ভুত! তিনি হুকুম জারি করলেন- দিনের বেলা বাজার বসবে না, বাজার বসবে রাতের বেলা। দিনে দোকানপাট বন্ধ থাকত, রাতে সবাই বাজার করত।

তিনি আরেকটি হুকুম জারি করলেন- নারীরা বাইরে বের হতে পারবে না। দেখা গেল, তার সিদ্ধান্ত অনেক নারী মানছে না। তখন তিনি জুতা প্রস্তুতকারীদের জানিয়ে দিলেন নারীদের জন্য জুতা না বানাতে। জুতা ছাড়া তো নারীরা বাইরে বের হতে পারবে না!

মিশরে তখন বন্যা হতো, বন্যায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আল হাকিম পরিকল্পনা করলেন নীলনদে বাঁধ দিবেন, যাতে বন্যা প্রতিরোধ করা যায়।

তার পরিকল্পনা শুনতে পেলেন একজন বিজ্ঞানী। তিনি জানালেন, 'আমি নীলনদে বাঁধ দেওয়ার কাজটি করতে পারব।' বিজ্ঞানী বসরা থেকে কায়রোতে আসলেন। নীলনদ দেখে বুঝতে পারলেন, এটাতে বাঁধ দেওয়ার সাধ্য তার নেই। কিন্তু অক্ষমতা প্রকাশ করলে পাগল খলিফা তাকে হত্যা করবেন।

বিজ্ঞানী ভাবলেন, পাগলের সাথে পাগলামি করবেন। তিনি পাগল হওয়ার অভিনয় করলেন। আল হাকিম নির্দেশ দিলেন- 'এই পাগলকে বন্দি করো।'

বন্দি হলেন বিজ্ঞানী। মিশরের কারাগারে ১০ বছর ছিলেন। এই সময় তিনি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। একদিন তিনি লক্ষ করেন, কারাগারের দেওয়ালের গর্ত দিয়ে আলোর সঙ্গে একটি বস্তুর উলটো প্রতিবিম্ব দেওয়ালে পড়ছে। তার এই ভাবনা পালটে দেয় আলোকবিদ্যার গতিপথ। শুরু হয় আলো নিয়ে এক নতুন পৃথিবীর সূচনা!

জেলে বসে গবেষণা করা সেই বিজ্ঞানীর নাম ইবনুল হাইসাম! অনেকের মতে তিনি আধুনিক আলোকবিদ্যার জনক। তার লেখা ৭ খণ্ডের 'কিতাবুল মানাজির' বা 'Book of Optics' ছিল মধ্যযুগের আলোকবিদ্যার রেফারেন্স বুক।

মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান এবং বর্তমানের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কীভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের ওপর নির্ভরশীল, এটা জানতে পড়তে পারেন গার্ডিয়ান প্রকাশিত 'মুসলিম মস্তিষ্ক: বিজ্ঞানের অনবদ্য গল্প'।

The Prisoner Scientist's Groundbreaking Discovery

In Islamic history, there was a caliph known as the 'Mad Caliph'. His name was Al-Hakim, the caliph of the Fatimid Caliphate in Egypt.

Al-Hakim's decrees were very strange! He ordered that markets would not operate during the day but at night. Shops remained closed during daylight hours.

He issued another decree - women were forbidden from going outside. When he saw many women disobeying, he ordered shoemakers to stop making women's shoes. Without shoes, women couldn't go out!

Egypt suffered from frequent Nile floods. Al-Hakim planned to build a dam on the Nile to control flooding.

A scientist heard about this plan and claimed he could build the dam. He came from Basra to Cairo but realized the task was impossible. Knowing the mad caliph would kill him for failure, he pretended to be insane.

Al-Hakim ordered: "Imprison this madman." The scientist spent 10 years in an Egyptian prison, where he made a groundbreaking discovery. Observing light entering through a small hole in his cell wall, he saw inverted images projected on the opposite wall. This observation revolutionized optics.

That imprisoned scientist was Ibn al-Haytham, considered by many as the father of modern optics. His 7-volume "Book of Optics" became the standard reference for optical science in the Middle Ages.

কারাবন্দি বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার

একটি ইতিহাস-বিজ্ঞানের অনবদ্য গল্প

মিশরের ফাতেমি খিলাফতের এক অদ্ভুতুড়ে খলিফা আল-হাকিম। ইতিহাস তাঁকে 'পাগলা খলিফা' নামে স্মরণ করে। তাঁর আজব সব ফরমান মিশরবাসীর জীবনকে করেছিলো দুর্বিষহ। দিনে বাজার বন্ধ, রাতে বাজার খোলার হুকুম। নারীদের জুতা নিষিদ্ধ করা, যাতে তারা ঘর থেকে বেরোতে না পারে। এমন শত অদ্ভুত আদেশে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই ঘটলো এক অদ্ভুত কাহিনীর সূচনা।

"নীলনদে বাঁধ দিতে হবে," খলিফার এ আদেশ শুনে বিজ্ঞানী ইবনুল হাইসাম যখন কায়রোতে এলেন, তখন তিনি জানতেন না এই সফর তাঁকে নিয়ে যাবে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। আর সেখানেই জন্ম নেবে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।"

বসরা থেকে আসা সেই বিজ্ঞানী যখন বুঝলেন নীলনদে বাঁধ দেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব, তখন তিনি বেছে নিলেন এক অভিনব পথ। পাগলামির অভিনয় করে বেঁচে থাকার কৌশল। খলিফার আদেশে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হলো। দশ বছর। অন্ধকার এক সেলে বন্দি থাকার সেই দীর্ঘ সময়ে একদিন তিনি লক্ষ করলেন কারাগারের প্রাচীরে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ছোট্ট একটি গর্ত দিয়ে প্রবেশ করা আলো পড়ছে বিপরীত দিকের দেয়ালে, কিন্তু কী আশ্চর্য! সেই আলোয় ভেসে উঠেছে বাইরের দৃশ্যের উল্টো প্রতিবিম্ব।

ইবনুল হাইসামের কারাগারে আবিষ্কার

কারাগারের প্রাচীরে আলোর এই বিচ্ছুরণই পরবর্তীতে ক্যামেরা অবস্কুরার ধারণা দিয়েছিল

সেই মুহূর্তে ইবনুল হাইসামের মাথায় খেলে গেল এক যুগান্তকারী চিন্তা। আলো কীভাবে চোখে প্রবেশ করে? কেন প্রতিবিম্ব উল্টো দেখা যায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি লিখে ফেললেন 'কিতাবুল মানাজির' বা 'বুক অব অপটিক্স'। সাত খণ্ডের এই গ্রন্থে তিনি প্রমাণ করলেন, আমরা বস্তু দেখি কারণ আলো সেই বস্তু থেকে আমাদের চোখে প্রবেশ করে - এর আগে সবাই ভাবত চোখ থেকে আলো বেরিয়ে বস্তুকে স্পর্শ করে।

ইবনুল হাইসামের প্রধান আবিষ্কার:

  • আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন
  • ক্যামেরা অবস্কুরার ধারণা প্রদান
  • চোখের গঠন ও দৃষ্টিপ্রক্রিয়া ব্যাখ্যা
  • প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সূত্র প্রণয়ন

আজ যখন আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলি, টেলিস্কোপে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করি, তখন কি কখনো ভেবে দেখি এই আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে একজন মুসলিম বিজ্ঞানীর কারাগারের নির্জন মুহূর্তগুলো? ইবনুল হাইসাম শুধু আলোকবিজ্ঞানই পরিবর্তন করেননি, তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে বন্দিদশাতেও একজন মানুষ পারে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে।

গল্পটি সংকলিত হয়েছে ঐতিহাসিক সূত্র ও 'মুসলিম মস্তিষ্ক: বিজ্ঞানের অনবদ্য গল্প' (দ্যা গার্ডিয়ান প্রকাশনা) থেকে

Post a Comment

0 Comments