জীবনের শূন্যতা: যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে বিস্মৃত হই
⛔ আজকালকার দুনিয়ায় 'ভাল্লাগেনা' একটা রোগের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারপাশে তাকালে আমরা এমন হাজার হাজার লোকের সন্ধান পাবো, যারা জীবন নিয়ে চরম পর্যায়ের হতাশ।
এমন নয় যে—তাদের অর্থকড়ি, প্রভাব-প্রতিপত্তি কিংবা নাম-যশ-খ্যাতির অভাব। তাদের কোনোকিছুরই অভাব নেই। তাদের সবকিছু আছে, তবু সবকিছু থেকেও যেন কোথাও কিছু নেই। তাদের জীবনে যেন এক বিশাল শূন্যতা বিরাজ করে আছে! প্রাপ্তিতে ভরে ওঠা তাদের জীবনপাতাটা জুড়ে যেন এক অদৃশ্য অপ্রাপ্তির আনাগোনা।
আচ্ছা, কেন এমন হয়❓
কখনো কখনো কি জীবন থেকে পালাতে মন চায় আপনার? মাঝে মাঝে হাহাকার করে ওঠে মন? ভীষণ মর্মপীড়ায় মাঝে মাঝে হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়? দুনিয়াকে বিষাক্ত লাগে? কবির মতন করে বলতে মন চায়, 'জন্মই আমার আজন্ম পাপ?'
আপনি হয়তো জানেন না আপনার এই দুর্বিষহ জীবনের নেপথ্য কারণ। ঠিক কোন কারণে আপনার ভরা বাসন্তী-জীবনে যাতনার প্লাবন, তা আপনার কাছে অজানা। তবে আপনার এই অজ্ঞাত, অনির্ণেয় দুঃখ-ভারাক্রান্ত জীবনের একটা কারণ সম্ভবত আমি জানি। আপনাকে উদ্দেশ্য করেই সম্ভবত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলছেন—
"আর যে আমার স্মরণ থেকে বিস্মৃত হবে, তার জীবন হয়ে পড়বে সংকুচিত।" [সূরা ত্ব-হা, আয়াত ১২৪]
আয়াতটির সাথে আপনার জীবনের কি কোনো মিল পাচ্ছেন? এই যে আপনার জীবনজুড়ে হাহাকার, অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি এবং গভীর শূন্যতাবোধ—এর কারণ সম্ভবত আপনি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিস্মৃত হয়েছেন।
আল্লাহর স্মরণ মানে হলো—জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুশাসন অনুসরণ করে চলা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা যা আপনার জন্য হালাল করেছেন, তা গ্রহণ করা এবং যা-কিছু তিনি হারাম করেছেন, তা এড়িয়ে চলা। প্রকৃতভাবে আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহকে ভালোবাসার নামই হলো আল্লাহর স্মরণ।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে আরো সহজ হবে। ধরা যাক, আপনি কোনো অফিসের বড় কর্মকর্তা এবং আপনার অধীনে ব্যাপক আকারে কর্মী নিয়োগ হয়ে থাকে। যেহেতু কর্মী নিয়োগের সকল ব্যাপার-স্যাপার আপনার হাত দিয়েই সম্পন্ন হয়, সুতরাং আপনি চাইলে এখানে স্বচ্ছভাবেও নিয়োগ দিতে পারেন অথবা রাখতে পারেন কোনো জালিয়াতির সুযোগ।
নিয়োগ সাধারণত মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই হয়। আপনার অফিসেও সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু একজন চৌধুরি সাহেব, যার আবার পকেটভর্তি টাকা, তিনি আপনার হাতে লাখ দুয়েক টাকার একটা বান্ডিল গছিয়ে দিয়ে বললেন, 'অমুক আর অমুক আমার লোক। তাদেরকে অমুক অমুক পোস্টে বসিয়ে দেবেন।'
যে দুটো পোস্টে চৌধুরি সাহেবের লোক বসিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বায়না এবং লোভনীয় সুযোগ এসেছে, সে পোস্টের জন্য আবেদন জমা পড়েছে হাজার হাজার, কিন্তু কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে, একটা লোক দেখানো পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ নিয়ে আপনি সকলকে একে একে বাদ করে দিলেন নানান ছুতোয়। আপনার পকেটে যেহেতু নগদ দুই লাখ টাকা ঢুকে পড়েছে, সেহেতু আর কোনোদিকে তাকানোর সময় কি আপনার আছে? চুলোয় যাক ওসব সততা আর স্বচ্ছতা!
আরো ধরা যাক, সেই দুই লাখ টাকা দিয়ে আপনি কুরবানির ঈদের জন্য একটা ই-য়া-য়া সাইজের গরু কিনলেন। আপনার কেনা গরুর সাইজ দেখে পাড়া-মহল্লায় তো হৈহৈ-রৈরৈ অবস্থা! এত বড় গরু দিয়ে এই তল্লাটে আগে কেউ আর কুরবানি দিতে পারেনি। আপনিই প্রথম!
আপনার সব থাকবে—উন্নতি, পদোন্নতি, বাড়ি আর গাড়ি। কিন্তু যা থাকবে না, তা হলো অন্তরের প্রশান্তি। এইটার জন্য বিস্বাদ হয়ে উঠবে আপনার জীবন। বিষিয়ে উঠবে আপনার দেহমন। এক অদৃশ্য যাতনার সাগরে ডুবে থাকবেন আপনি। আপনার দালানকোঠা হয়তো আকাশ ছোঁবে, আপনার ক্ষমতার বলয় হয়তো বহুগুণ বিস্তৃত হবে, আপনার নাম-যশ-খ্যাতি হয়তো সীমানা ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু অন্তরের অন্তর্দহনে পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হতে থাকবেন আপনি।
0 Comments